Friday 29 May, 2009

মঙ্খারাপের রাতে...

লিখতে গেলাম মনখারাপ, হয়ে গেল মঙ্খারাপ। টাইপ করে বাংলা লেখার এই এক মজা। আরো মজা লাগল এই ভেবে যে মঙ্খারাপটা মোটেই মনখারাপের মত নয়, বরং শুনতে অনেকটা ময়ূরপঙ্খী ময়ূরপঙ্খী! J ইশ! কবিতা লিখতে পারলে একটা মঙ্খারাপের নৌকা ভাসাতাম! নাহলে একটা বেশ রাজপুত্তুরের গল্প, যেখানে রাজপুত্তুর স্বপ্ন দেখে। রোজ তার স্বপ্নে আসে এক সুন্দরী পরী। সাদা রঙের ফ্রক আর চোখে একটা ইয়াব্বড়ো সানগ্লাস! কিন্তু পরী থাকে অনেক দূরে। আর রাজপুত্তুরের কাছে তো শুক-সারী কেউ নেই। তাই তাকে কেউ বলেও দিতে পারে না পরী কোথায় থাকে? এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই রাজপুত্তুরের গোমড়ামুখ। আর সেই যুগও তো আর নেই যে রাজপুত্তুরের বাবার রাজার মত হাল। আমাদের রাজপুত্তুর খুব সাধারণ। তাই তার মোবাইল আছে। কিন্তু মোবাইলের ব্যালান্স শুধুই শেষ হয়ে যায়।L আর পরীর সঙ্গে তো যতই কথা বলে, ততই মনে হয় কি যেন রয়ে গেল বাকি! এই যাহ্‌! না না। গল্পটা গুলিয়ে গেছে।L এরকম না! কোথায় রাজপুত্তুর পরীর খোঁজে মঙ্খারাপের নৌকো করে বেরিয়ে পড়বে সাতসমুদ্র আর তেরো নদী পার করতে, তা না কোত্থেকে হতচ্ছাড়া মোবাইল এসে হাজির হল। সব ওই মঙ্খারাপের খেলা! দেখতে শুনতে ময়ূরপঙ্খী হলে কি হবে, আসলে তো ছদ্মবেশী মনখারাপ।

পুনশ্চঃ

নাহ্‌। পুনশ্চ বলে খেয়াল হল কি ভেবেছিলাম ভুলে গেছি! L

Thursday 28 May, 2009

আজি হতে কত বর্ষ পরে?

জয়িতা,

দেখতে দেখতে আরো এক বছর হয়ে গেল। আমার এখনো জানিস বছরটা অনেকগুলো দিনে শুরু হয়। আলাদা আলাদা ক্যালেন্ডার প্রত্যেকটা দিনের জন্য! J সেইরকম অনেকগুলো দিনের একটা দিন আজ। আর সেইজন্যেই এই চিঠি লিখতে বসা। এখন তো আর আমাদের অত চিঠি লেখাই হয় না! মনে আছে প্রথম প্রথম রোজ একটা করে চিঠি না পেলে মনখারাপ তো করতই আর না লিখলে... না লিখলে মনে হত কি একটা বাকি থেকে গেল! চিঠি লেখার জন্যেই আমরা খুব কম সময়ে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম, নারে? তোর মতই আমারো চিঠি লিখতে খুব ভাল লাগত। এখনো লাগে! তাই প্রথমবার এই দিনটায় তুই যখন একটা চিঠি চেয়েছিলি, তখনি ঠিক করে ফেলেছিলাম প্রতি বছর আর কিছু দিই বা না দিই একটা চিঠি দেবই।

তুই দিল্লীতে এখন নিশ্চয় চুটিয়ে প্রেম করছিস! তুই যেখানে যাস সেখানেই কেমন একটা প্রেমিক জুটিয়ে ফেলিস! এবার আমিও করছি। তোকে বলিনি তো! তোর দ্যুতিকে মনে আছে? সেই যে আমাদের সঙ্গেই পড়ত। ওর তো জানিসই আমার ওপর একটা চাপা ক্রাশ ছিল! তুই দিল্লী যেতেই... হাসছিস কেন? ধরে ফেলেছিস! L This is unfair! তুই প্রত্যেকবার ধরে ফেলিস! L আমি বোধহয় একটা ক্যাবলা কার্তিক হয়েই থেকে যাব! তাও একটু তোকে গুল দেওয়ার চেষ্টা করলাম। সেই আমার প্রিয় গানটার মতই! আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি/ কিছু মিথ্যে বাহাদুরি!J

জানিস সেদিন একবার কলেজ স্ট্রীট যেতে হয়েছিল। কয়েকটা বই কিনতে। কিনে কলেজ স্ক্যোয়ারের পাশ দিয়ে হাঁটছি। সেন্ট্রাল থেকে মেট্রো ধরব। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! কোনোরকমে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হাওয়াও দিচ্ছিল বেশ। একবার দমকা হাওয়ায় গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি এসে মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। ওমনি আমার হঠাৎই সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। সেদিনও আকাশ ভরা রোদের মাঝে এইরকম আচমকা বৃষ্টি নেমেছিল। আমি আর তুই ছুটতে ছুটতে বেণুদার ক্যান্টিনের শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তখনশেডের তলায় যাওয়ার আগেই বেশ খানিকটা ভিজে গেছিলাম। তখন তোর কানের লতিতে মুক্তোর মত টলটল করছে এক ফোঁটা জল। আর তোর সেই মাথার সামনে এসে পড়া বেয়ারা চুলগুলো, যেগুলোর জন্যে সবাই আড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে তোকে দেখত, সেইগুলোতেও ছোট ছোট কাঁচের দানার মত জল জড়িয়ে। তার ওপরে পড়ন্তবেলার রোদ যখন পড়ল তোর মুখে... ভাগ্যিস সেদিন ক্যান্টিন বন্ধ ছিল। তাই খুব আনন্দ হচ্ছিল যে আর কেউ নেই যে আড়চোখে তাকিয়ে তোকে দেখবেJ তাই সেদিন হাঁ করে দেখছিলাম তোকে। তারপরেই তো তুই আমার মুখটা ধরে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলি! চায়ের দোকানটায় দাঁড়িয়ে জানিস এক পলকে সব মনে পড়ে গেল। অনেকদিন পরে তোকে দেখার আনন্দে আরেকটু হলে বইএর প্যাকেটটা ওখানেই ফেলে আসছিলাম! J

সেইসময়কার কথা মনে পড়লে মনটা এত খুশি হয়ে ওঠে যে খেয়ালই থাকে না কি করছি! এই তো পরশুদিন তুই যখন ফোন করলি তখন তো আমি অফিসে। সেদিনও আমরা বেশ নস্টালজিক হয়েছিলাম। ফোনটা রাখার কিছুক্ষণ পরে অমিতাভ এসে ঢুকেছে, ঢুকেই বলে, কি ব্যাপার? এত খুশি কিসের? দিল্লী থেকে ফোন নিশ্চয়! আমার তখন খেয়াল হল আমি আপনমনে কখন শিস দিতে শুরু করেছি!JJ

অ্যাইই! তোর আর কতদিন লাগবে? L তোর ঐ প্রফেসর প্যানেলের বাকিদের বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না? ওদেরকে বল না কোলকাতায় একজন রোজ সকালে উঠে মোবাইলের ক্যালেন্ডার খুলে হিসেব করে কদিন হল! আজকের দিনটা কাটলে ১২৭ দিন হবে!L সব কিরকম ফাঁকা ফাঁকা লাগে জানিস! চুপচাপ! আবার কোথাও গিয়ে যে একটু আড্ডা মারব, মনে হয় সবাই খুব চিৎকার করছে। মাথাব্যাথা করে তখন। রান্নাঘরে ঢুকতেও ইচ্ছে করে না। ঢুকে কার গায়ে জল ছেটাবো? কার গালে ময়দা মাখিয়ে ভুত সাজাবো? আর একা একা রান্না করতে গিয়ে কিছুই সামলাতে পারি না! L তুই যাওয়ার পরে কিছুই আর ভালো লাগে না। চিঠি লিখতেও না। খুব একা লাগে। খুব একা!

ফিরে আয় না তাড়াতাড়ি!

অর্ণব।

২৮ মে, ২০১৬

PS:

দেখেছিস! এত কথার মাঝে আসল কথাটাই ভুলে গেছি! Happy Anniversary! J




Wednesday 6 May, 2009

ঝড়

আপনমনেই মনের মতন সঙ্গী খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের প্রশ্ন আজ অবান্তর। হাসিখুশি থাকাটাই ভালো থাকা তখন; কান্নার তাৎপর্য বুঝি না, অথচ একে অপরের পরিপূরক। চোখ বুঁজলেই স্বপ্ন দেখি শুধু। তার রঙ আছে কিনা কখনো খেয়াল করিনি। অল্পস্বল্প গল্পতেই স্বাচ্ছন্দ্য তখন। ছন্দের প্রয়োজন বোধ করিনি। তাই ছিল না ছড়া, কবিতা লেখার চেষ্টা। কালবৈশাখী দেখেছি শুধু, অনুভব করিনি। রবিঠাকুরের গান শুনেছি শুধু, অনুধাবন করিনি। দিন কাটে দিনের মতন, আমি আমার মতন। হঠাৎ...

হঠাৎই ঝড় উঠল। আকাশ কালো করে মেঘ করেনি, স্তব্ধ প্রতীক্ষাও ছিল না কোথাও। তবুও ঝড় উঠল।

সেই ঝোড়ো হাওয়ায় মাতাল আমি হাসলাম, কাঁদতে শিখলাম। ধুলো ছিল না ঝড়ে। তবুও আমার চারদিক ঢাকা পড়ল, গুঁড়ো গুঁড়ো ভালোলাগায়। দুহাত ছড়িয়ে সেই ভালোলাগার গুঁড়ো গায়ে মাখতে মাখতে বুঝলাম, ভালোবাসতে শিখেছি। পশলা পশলা বৃষ্টি নামল। এ জনমের প্রথম বর্ষণে প্রাণমন জুড়িয়ে ভিজলাম। ভিজতে ভিজতে সকাল থেকে সন্ধ্যে হল।

একসময় ঝড় বলল,

- চল!

- কোথায়?, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

- কোথাও একটা!

চলতে চলতে অনেকটা সময় পেরিয়ে এলাম। ততদিনে ঝোড়ো হাওয়ায় উথালি পাথালি আমার বুক, আমার মনেতে নাই সুখতাই ঝড়ের নাম দিলাম দুঃখজাগানিয়া ঝড়ের দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামল, তবু ঠোঁটে লেগে হাসি। আবার ভিজলাম, ভাসলাম, ডুবলাম... স্বপ্ন এলো, স্বপ্ন দেখার দুঃসাহসও এলো। সন্ধ্যে পেরিয়ে মায়াবী এক রাত ঘনালো।

একফালি চাঁদের আলোয় ঝড়কে বললাম,

- আমার ঝড়!

- আমি তো সবার! হাসতে হাসতে জবাব দিল ঝড়।

- তুমি আমার হবে?

নিমেষে উচ্ছ্বলতা শান্ত হল। গোধূলিরঙা হাসিমুখে বলল ঝড়। এবার আমার ফেরার সময় হলহঠাৎ দেখি আমার চেনা ঝোড়ো হাওয়া চুপটি করে দাঁড়িয়ে আমার সামনে। সে এখন শান্ত, শীতল। ঝড় হারানোর ভয়ে বললাম, তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও যে আজ ঝোড়ো হাওয়া! এ মাতাল হাওয়া একা কি করে সামলাই?। অমনি দেখি আমার অনেকদিনের চেনা ঝড় আবার আমার সামনে এসে চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, পাগল ছেলে! একা আবার কি? আমি তো আছি! শুধু ঝড় হয়ে নয়, অন্য কোনোওভাবে; অন্য কোনোওখানে।

আমি রইলাম প্রতীক্ষায়, আবার কবে এক দমকা হাওয়ায় ঝড়ের সাথে মেতে উঠব, একসাথে ভিজতে ভিজতে যাব কোথাও একটা