Thursday 28 May, 2009

আজি হতে কত বর্ষ পরে?

জয়িতা,

দেখতে দেখতে আরো এক বছর হয়ে গেল। আমার এখনো জানিস বছরটা অনেকগুলো দিনে শুরু হয়। আলাদা আলাদা ক্যালেন্ডার প্রত্যেকটা দিনের জন্য! J সেইরকম অনেকগুলো দিনের একটা দিন আজ। আর সেইজন্যেই এই চিঠি লিখতে বসা। এখন তো আর আমাদের অত চিঠি লেখাই হয় না! মনে আছে প্রথম প্রথম রোজ একটা করে চিঠি না পেলে মনখারাপ তো করতই আর না লিখলে... না লিখলে মনে হত কি একটা বাকি থেকে গেল! চিঠি লেখার জন্যেই আমরা খুব কম সময়ে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম, নারে? তোর মতই আমারো চিঠি লিখতে খুব ভাল লাগত। এখনো লাগে! তাই প্রথমবার এই দিনটায় তুই যখন একটা চিঠি চেয়েছিলি, তখনি ঠিক করে ফেলেছিলাম প্রতি বছর আর কিছু দিই বা না দিই একটা চিঠি দেবই।

তুই দিল্লীতে এখন নিশ্চয় চুটিয়ে প্রেম করছিস! তুই যেখানে যাস সেখানেই কেমন একটা প্রেমিক জুটিয়ে ফেলিস! এবার আমিও করছি। তোকে বলিনি তো! তোর দ্যুতিকে মনে আছে? সেই যে আমাদের সঙ্গেই পড়ত। ওর তো জানিসই আমার ওপর একটা চাপা ক্রাশ ছিল! তুই দিল্লী যেতেই... হাসছিস কেন? ধরে ফেলেছিস! L This is unfair! তুই প্রত্যেকবার ধরে ফেলিস! L আমি বোধহয় একটা ক্যাবলা কার্তিক হয়েই থেকে যাব! তাও একটু তোকে গুল দেওয়ার চেষ্টা করলাম। সেই আমার প্রিয় গানটার মতই! আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি/ কিছু মিথ্যে বাহাদুরি!J

জানিস সেদিন একবার কলেজ স্ট্রীট যেতে হয়েছিল। কয়েকটা বই কিনতে। কিনে কলেজ স্ক্যোয়ারের পাশ দিয়ে হাঁটছি। সেন্ট্রাল থেকে মেট্রো ধরব। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! কোনোরকমে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হাওয়াও দিচ্ছিল বেশ। একবার দমকা হাওয়ায় গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি এসে মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। ওমনি আমার হঠাৎই সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। সেদিনও আকাশ ভরা রোদের মাঝে এইরকম আচমকা বৃষ্টি নেমেছিল। আমি আর তুই ছুটতে ছুটতে বেণুদার ক্যান্টিনের শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তখনশেডের তলায় যাওয়ার আগেই বেশ খানিকটা ভিজে গেছিলাম। তখন তোর কানের লতিতে মুক্তোর মত টলটল করছে এক ফোঁটা জল। আর তোর সেই মাথার সামনে এসে পড়া বেয়ারা চুলগুলো, যেগুলোর জন্যে সবাই আড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে তোকে দেখত, সেইগুলোতেও ছোট ছোট কাঁচের দানার মত জল জড়িয়ে। তার ওপরে পড়ন্তবেলার রোদ যখন পড়ল তোর মুখে... ভাগ্যিস সেদিন ক্যান্টিন বন্ধ ছিল। তাই খুব আনন্দ হচ্ছিল যে আর কেউ নেই যে আড়চোখে তাকিয়ে তোকে দেখবেJ তাই সেদিন হাঁ করে দেখছিলাম তোকে। তারপরেই তো তুই আমার মুখটা ধরে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলি! চায়ের দোকানটায় দাঁড়িয়ে জানিস এক পলকে সব মনে পড়ে গেল। অনেকদিন পরে তোকে দেখার আনন্দে আরেকটু হলে বইএর প্যাকেটটা ওখানেই ফেলে আসছিলাম! J

সেইসময়কার কথা মনে পড়লে মনটা এত খুশি হয়ে ওঠে যে খেয়ালই থাকে না কি করছি! এই তো পরশুদিন তুই যখন ফোন করলি তখন তো আমি অফিসে। সেদিনও আমরা বেশ নস্টালজিক হয়েছিলাম। ফোনটা রাখার কিছুক্ষণ পরে অমিতাভ এসে ঢুকেছে, ঢুকেই বলে, কি ব্যাপার? এত খুশি কিসের? দিল্লী থেকে ফোন নিশ্চয়! আমার তখন খেয়াল হল আমি আপনমনে কখন শিস দিতে শুরু করেছি!JJ

অ্যাইই! তোর আর কতদিন লাগবে? L তোর ঐ প্রফেসর প্যানেলের বাকিদের বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না? ওদেরকে বল না কোলকাতায় একজন রোজ সকালে উঠে মোবাইলের ক্যালেন্ডার খুলে হিসেব করে কদিন হল! আজকের দিনটা কাটলে ১২৭ দিন হবে!L সব কিরকম ফাঁকা ফাঁকা লাগে জানিস! চুপচাপ! আবার কোথাও গিয়ে যে একটু আড্ডা মারব, মনে হয় সবাই খুব চিৎকার করছে। মাথাব্যাথা করে তখন। রান্নাঘরে ঢুকতেও ইচ্ছে করে না। ঢুকে কার গায়ে জল ছেটাবো? কার গালে ময়দা মাখিয়ে ভুত সাজাবো? আর একা একা রান্না করতে গিয়ে কিছুই সামলাতে পারি না! L তুই যাওয়ার পরে কিছুই আর ভালো লাগে না। চিঠি লিখতেও না। খুব একা লাগে। খুব একা!

ফিরে আয় না তাড়াতাড়ি!

অর্ণব।

২৮ মে, ২০১৬

PS:

দেখেছিস! এত কথার মাঝে আসল কথাটাই ভুলে গেছি! Happy Anniversary! J




4 জনের কথা:

TutorialBD .com said...

আপনার লেখা! খুবই উচু মানের লেখা.....

phenomenal woman said...

Khasa hoyechhe. Tobe khub idealistic. Ami hole rektu practical likhtam hoyto...

:)

Nachiketa said...

Like felun ekta!
Duto mishiye debo nahoy!
:)

Amar problem to otai. Idealistic. Somoy sujog na ele practical hote pari na!
:(

বরফ পানি said...

অসম্ভব অসম্ভব সুইট। খুব মুগ্ধ হলাম।

Post a Comment