আপনমনেই মনের মতন সঙ্গী খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের প্রশ্ন আজ অবান্তর। হাসিখুশি থাকাটাই ভালো থাকা তখন; কান্নার তাৎপর্য বুঝি না, অথচ একে অপরের পরিপূরক। চোখ বুঁজলেই স্বপ্ন দেখি শুধু। তার রঙ আছে কিনা কখনো খেয়াল করিনি। অল্পস্বল্প গল্পতেই স্বাচ্ছন্দ্য তখন। ছন্দের প্রয়োজন বোধ করিনি। তাই ছিল না ছড়া, কবিতা লেখার চেষ্টা। কালবৈশাখী দেখেছি শুধু, অনুভব করিনি। রবিঠাকুরের গান শুনেছি শুধু, অনুধাবন করিনি। দিন কাটে দিনের মতন, আমি আমার মতন। হঠাৎ...
হঠাৎই ঝড় উঠল। আকাশ কালো করে মেঘ করেনি, স্তব্ধ প্রতীক্ষাও ছিল না কোথাও। তবুও ঝড় উঠল।
সেই ঝোড়ো হাওয়ায় মাতাল আমি হাসলাম, কাঁদতে শিখলাম। ধুলো ছিল না ঝড়ে। তবুও আমার চারদিক ঢাকা পড়ল, গুঁড়ো গুঁড়ো ভালোলাগায়। দু’হাত ছড়িয়ে সেই ভালোলাগার গুঁড়ো গায়ে মাখতে মাখতে বুঝলাম, ভালোবাসতে শিখেছি। পশলা পশলা বৃষ্টি নামল। এ জনমের প্রথম বর্ষণে প্রাণমন জুড়িয়ে ভিজলাম। ভিজতে ভিজতে সকাল থেকে সন্ধ্যে হল।
একসময় ঝড় বলল,
- ‘চল!’
- ‘কোথায়?’, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
- ‘কোথাও একটা!’
চলতে চলতে অনেকটা সময় পেরিয়ে এলাম। ততদিনে ঝোড়ো হাওয়ায় ‘উথালি পাথালি আমার বুক, আমার মনেতে নাই সুখ’। তাই ঝড়ের নাম দিলাম ‘দুঃখজাগানিয়া’। ঝড়ের দু’চোখ বেয়ে বৃষ্টি নামল, তবু ঠোঁটে লেগে হাসি। আবার ভিজলাম, ভাসলাম, ডুবলাম... স্বপ্ন এলো, স্বপ্ন দেখার দুঃসাহসও এলো। সন্ধ্যে পেরিয়ে মায়াবী এক রাত ঘনালো।
একফালি চাঁদের আলোয় ঝড়কে বললাম,
- ‘আমার ঝড়!’
- ‘আমি তো সবার!’ হাসতে হাসতে জবাব দিল ঝড়।
- ‘তুমি আমার হবে?’
নিমেষে উচ্ছ্বলতা শান্ত হল। গোধূলিরঙা হাসিমুখে বলল ঝড়। ‘এবার আমার ফেরার সময় হল’। হঠাৎ দেখি আমার চেনা ঝোড়ো হাওয়া চুপটি করে দাঁড়িয়ে আমার সামনে। সে এখন শান্ত, শীতল। ঝড় হারানোর ভয়ে বললাম, ‘তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও যে আজ ঝোড়ো হাওয়া! এ মাতাল হাওয়া একা কি করে সামলাই?’। অমনি দেখি আমার অনেকদিনের চেনা ঝড় আবার আমার সামনে এসে চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, ‘পাগল ছেলে! একা আবার কি? আমি তো আছি! শুধু ঝড় হয়ে নয়, অন্য কোনোওভাবে; অন্য কোনোওখানে।’
আমি রইলাম প্রতীক্ষায়, আবার কবে এক দমকা হাওয়ায় ঝড়ের সাথে মেতে উঠব, একসাথে ভিজতে ভিজতে যাব ‘কোথাও একটা’।